ভয়াবহ সংঘাত-সহিংসতায় আবারও রক্তাক্ত হলো দেশ। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকার পতনের ‘একদফায়’ রূপান্তরের পর অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে গতকাল রোববার সারা দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলা কিংবা আক্রমণে জীবন হারিয়েছেন কমপক্ষে ১০৪ জন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। নিহতের তালিকায় আছেন শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ঢুকে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। হামলা হয়েছে ২০টি থানাসহ পুলিশের ২৭ স্থাপনায়। বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এ পরিস্থিতিতে রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। আজ সোমবার থেকে তিন দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।
গত শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ‘সরকার পতনের’ একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই ঘোষণায় বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো সমর্থন দিয়ে মাঠে নামে।
একদফা আদায়ে গতকাল থেকেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বিপরীতে তাদের প্রতিরোধে মাঠে নামেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা একদফার আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। দুপক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের জেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ সংঘাত হয়েছে। গতকাল রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় সংঘাত-সহিংসতায় উভয় পক্ষের হাতে ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোটা দেখা গেছে। সংঘাতের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে সাদা পোশাকের লোকজনকে। দিনভর ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশকে গত কয়েক দিনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ‘নীরব দর্শকের’ ভূমিকায় দেখা গেছে। তবে কয়েকটি জেলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি করেছে পুলিশ।
সার্বিক পরিস্থিতিতে আলোচনার দরজা খোলা রাখার কথা বলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির পক্ষ থেকে নেতারা বলছেন, ছাত্রদের দাবি পূরণ করা হয়েছে। এখন এই আন্দোলন আর তাদের হাতে নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর দরজা খোলা রাখার ঘোষণাও এসেছে। তবে আন্দোলনকারীরা আলোচনার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করে একদফা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। অসহযোগ কর্মসূচি চলার মধ্যেই গতকাল আন্দোলনকারীরা সরকার পতনের একদফা দাবিতে আজ সোমবার ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
গতকাল তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, আন্দোলন আর আন্দোলনের জায়গায় নেই। আন্দোলন এখন সহিংসতায় চলে গেছে। আন্দোলনকারী বা যারা দাবি জানাচ্ছে বা সাধারণ নাগরিকদের মতের সঙ্গে আমরা একমত। আমরা এই পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই। তবে অশান্তির সৃষ্টি করলে সেটা আইনের মাধ্যমে শক্ত হাতে দমন করা হবে।
আন্দোলনকারীদের একদফা ঘোষণার পর শনিবারই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা-পাল্টা হামলা হয়েছে। কোথাও কোথাও অগ্নিসংযোগেরও খবর পাওয়া গেছে। গতকালও এমন পরিস্থিতি ছিল। গত কয়েকদিনের মতো গতকালও বেশি টার্গেট ছিল পুলিশের স্থাপনা। পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সিরাজগঞ্জ ও কুমিল্লায় থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশের ১৪ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসীরা ডিএমপির যাত্রাবাড়ী ও খিলগাঁও থানা, টাঙ্গাইলের গোড়াই হাইওয়ে থানা, বগুড়ার সদর, দুপচাঁচিয়া ও শেরপুর থানা এবং নারুলী পুলিশ ফাঁড়ি, জয়পুরহাট সদর থানা, কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশুগঞ্জ থানা, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর থানা, হবিগঞ্জের মাধবপুর ফাঁড়ি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ অফিস, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং দিনাজপুর সদর থানা আক্রমণ করেছে। এতে ১৪ জনকে হত্যা ছাড়াও হামলায় পুলিশের তিন শতাধিক সদস্যকে আহত করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি, উত্তরা, সায়েন্স ল্যাব এলাকা, মিরপুর, পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, সেগুনবাগিচা এলাকা, রাজধানীর বাইরে সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর, মুন্সীগঞ্জ, মাগুরা, পাবনা, বরিশাল, ভোলা, বগুড়া, জয়পুরহাট, ফেনী, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, সিলেট ও লক্ষ্মীপুরে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
রোববার রাত সোয়া ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কালবেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য ও খবর অনুযায়ী ঢাকাসহ সারা দেশে ১০৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১১ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২৭ জন, নরসিংদীতে ৬, ফেনীতে ৮, কিশোরগঞ্জে ৫, বগুড়ায় ৫, মুন্সীগঞ্জে ৩, মাগুরায় ৪, ভোলায় ৩, রংপুরে ৪, পাবনায় ৩, সিলেটে ৫, কুমিল্লায় ২, শেরপুরে ৩, জয়পুরহাটে ২, হবিগঞ্জে ১, লক্ষ্মীপুরে ৮, সাভারের আশুলিয়ায় ১, কক্সবাজারে ১ ও বরিশালে ১ জন, গাজীপুরের শ্রীপুরে ১ জন মারা যান।
ঢাকার দুই হাসপাতালে ৭ মরদেহ: শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনই রাজধানীজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত এক শিক্ষার্থীসহ সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফার্মগেট এলাকা থেকে তাহিদুল ইসলাম (২২) নামের এক যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে জিগাতলা এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সিদ্দিকীকে (২৩) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা জানান, আগেই তিনি মারা গেছেন। আবদুল্লাহ হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। পরে বিভিন্ন এলাকা ও হাসপাতাল থেকে আরও পাঁচজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়।
সিরাজগঞ্জে পুলিশ, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ ২৭ জন নিহত: সিরাজগঞ্জে পুলিশের ১৩ সদস্যসহ মোট ২৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বিকেলে এনায়েতপুর থানায় ঢুকে হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলার রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলায় ভম্রকাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিটন (৬০), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন (৩৫) ও ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম নিহত হন। একই সময় দুর্বৃত্তরা রায়গঞ্জ প্রেস ক্লাবে হামলা চালিয়ে দৈনিক খবরপত্রের উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিককে (৬০) কুপিয়ে হত্যা করে। তিনি রায়গঞ্জ উপজেলার সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ শহরে সংঘর্ষের ঘটনায় এসএস রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন যুবদল নেতা রন্জু (৪০), ছাত্রদল নেতা সুমন (৩০) ও যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফ (৪২)।
জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারী, বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিছু হটলে পুরো শহর দখল করে নেয় আন্দোলনকারী ছাত্র ও বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। ওই সময় তারা ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাসা, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাসা, আওয়ামী নেতা বিমল কুমার দাসের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চয়ন ইসলাম এমপির বাসা ভাঙচুর করা হয়। সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বাসভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাত ১১টার দিকে দুজনের ভস্মীভূত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন শহরের জানপুর এলাকার ছাত্রলীগ কর্মী শাহিন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সংসদ সদস্য জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে খাজা ইউনূস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজনের মরদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন এনায়েতপুর থানার বেথিলি গ্রামের বাসিন্দা ও খামারগ্রাম ডিগ্রি কলেজের ছাত্র শিহাব (১৮), সিয়াম (১৯) ও খুকনি গ্রামের মো. ইহাইয়া (৩৫)। তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাজা ইউনূস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কৌশিক আহমেদ।
বেলকুচি ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলা জজ আদালত, এসিল্যান্ড অফিস, মুক্তির সোপান স্মৃতিসৌধ, শিল্পকলা একাডেমিসহ শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
রংপুরে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরকে হত্যার পর পৈশাচিকতা, নিহত ৪ : রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুরের পায়রা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের একজন হলেন রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন রায়। অন্যরা হলেন কাউন্সিলরের গাড়িচালক কমল, গুড়াতি পাড়ার খায়রুল ইসলাম খসরু ও মাসুম। নিহতরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। কাউন্সিলর ও তার গাড়িচালককে হত্যার পর লাশ নিয়ে পৈশাচিকতা চালানো হয়। লাশের গলায় রশি ও তার পেঁচিয়ে বিভিন্ন এলাকায় টানাহেঁচড়া করে দুর্বৃত্তরা। সাত ঘণ্টা পর তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে সকাল ১১টার দিকে শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।
পাবনায় তিনজনের মৃত্যু: পাবনায় গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। দুপুরে শহরের এ হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মহিবুল, জাহিদ ও ফাহিম। তারা শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শহরের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়।
মুন্সীগঞ্জে নিহত ৩ : রোববার সকালে মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন রিয়াজুল ফরাজী, মো. সজল ও ডিপজল সর্দার। এ ঘটনায় আরও ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হন।
গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল।
মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, নিহত ৪: মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। সকাল ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাব্বীর মৃত্যুর বিষয়টি জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
বরিশাল: বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়িতে হামলার সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় হামলাকারীরা মহানগর ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরীকে হত্যা করে। পরে আন্দোলকারী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ির সামনে ১১টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
ভোলায় নিহত ৩: ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের পরিচয় জানা গেছে। আন্দোলনকারীদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ অফিস, শ্রমিক লীগ অফিস ও পৌরসভা ভাঙচুর চালিয়ে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। এ সময় ডিসি অফিসের দুটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুরে নিহত ৮: লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকেই মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে শহরের ঝুমুর ও মাদাম ব্রিজ এলাকায় দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন কাউসার, আদনান, সাব্বীর ও মিরাজ। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।ফেনীতে নিহত ৮: ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী মহিপাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নরসিংদীতে ৬ জন নিহত: নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। মাধবদী থানার ওসি কামরুজ্জামান কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), মাধবদী পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নওশের (৪০) ও অজ্ঞাতপরিচয় (৩৮)।
কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম টিটুর বাসার আগুন নেভানোর সময় দুজন কেয়ারটেকার ও স্ট্রোক করে একজন ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
বগুড়ায় নিহত ৫: বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। বগুড়ার সাতমাথায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় বগুড়া টিঅ্যান্ডটি অফিস, আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ অফিস, টাউন ক্লাব, সদর ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।
সিলেটে ৫ জনের মৃত্যু: সিলেটের গোলাপগঞ্জে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ধারাবহর হাসপাতালের সামনের ৫ জন নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে পুলিশ বিজিবি ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ৫০ জন আহত হন। এ ছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহত ২ জন হলেন ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)।
বিভিন্ন স্থানে আরও ৯ জন নিহত: এ ছাড়া জয়পুরহাটে ২ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ দুই জন, হবিগঞ্জ জেলায় দুপক্ষের সংঘর্ষে রিপন শীল নামের এক যুবক এবং শেরপুরে শহরের কলেজ মোড় এলাকায় গাড়ির চাপায় তিনজন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের সময় ছুরিকাঘাতে তফাজ্জল হোসেন (২২) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হলেও তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।