০৮:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঞ্জেরী, লেকচার ও পপি পাবলিকেশন্সের সম্পদের খোঁজে এনবিআর

নোট ও গাইডবই বিক্রি করে বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া তিন প্রকাশনা সংস্থা পাঞ্জেরী, লেকচার ও পপি পাবলিকেশন্সের আয়-ব্যয়ের তথ্যে গরমিল, বিপুল সম্পদ ও কর ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধে প্রতিষ্ঠান তিনটির বিষয়ে এই অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।

দেশে নোট ও গাইডবই প্রকাশ এবং বিক্রি করা অবৈধ। তারপরও চোখের সামনে দেদার নোট ও গাইডবই প্রকাশ করে যাচ্ছে বড় পাবলিকেশনগুলো। তাদের এই পুরো অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও তা নির্মূলে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এবার পাবলিকেশনগুলোর অবৈধ ব্যবসা এবং এর পেছনে বিপুল সম্পদের খোঁজে নেমেছে দুদক। সংস্থাটির সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে ২২টি বড় পাবলিকেশন্সের নানান অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ায় এর মধ্যে তিনটি পাবলিকেশন্স—পাঞ্জেরী, লেকচার ও পপিকে অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য বাছাই করা হয়।
দুদকের অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠান তিনটির বিগত কয়েক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী, অডিট রিপোর্ট, আয়কর রিটার্ন, ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ওই সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী, অডিট রিপোর্ট দেখানো বিক্রির পরিমাণের চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো আয়কর ফাঁকি দিতে রিটার্নে বিক্রি কম দেখিয়ে ব্যবসায় লোকসান দেখিয়েছে। তাই দুদক মনে করে, কর বিভাগের অনুসন্ধানের পরই এর আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। সে জন্য সংস্থাটি ১১ মে এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়ে পাবলিকেশন্স তিনটির আয় ও সম্পদ লুকানো এবং কর ফাঁকির বিষয়টি অনুসন্ধানের পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করে। দুদকের চিঠি পেয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট কর বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। এখন কর বিভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয় ও সম্পদের খোঁজে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে।

এনবিআরের কর বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দুদকের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি পাবলিকেশন্সের বিরুদ্ধে অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্য যাচাই করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

অবৈধ নোট-গাইড ব্যবসা ও কর ফাঁকির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লেকচার পাবলিকেশন্সের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নোটবইয়ের ব্যবসা অবৈধ হলেও এটি চলছে। আর সত্যি কথা, আমরা বই না করলে দেশে বই প্রকাশিত হবে না। এখন দুদক ২০১৭ সাল থেকে এগুলো নিয়ে তদন্ত করছে। এটি শুধু আমার একার সমস্যা নয়; আমাদের সমিতির সবাই মিলে বিষয়টি দুদককে বোঝানোর চেষ্টা করছে।জানা যায়, পুরো বিষয়টি নিয়ে দুদকের সঙ্গে দেনদরবার করছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। এ বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান যেকোনো পদক্ষেপ নিলে আমরা সহযোগিতা করি। সক্ষমতায় এখানকার সব পাবলিকেশন সমান নয়। কারও ব্যবসা বড়, কারও ছোট। ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো হিসাব-নিকাশে ভুল হতে পারে। তবে এনবিআরের বিষয়টি এখনো অবগত নই। তাই সবকিছু না জেনে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’ পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী কামরুল হাসান শায়কের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে একটি সূত্র জানায়, তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

পাঞ্জেরী, লেকচার ও পপি পাবলিকেশন্সের সম্পদের খোঁজে এনবিআর

প্রকাশ : ০৬:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩

নোট ও গাইডবই বিক্রি করে বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া তিন প্রকাশনা সংস্থা পাঞ্জেরী, লেকচার ও পপি পাবলিকেশন্সের আয়-ব্যয়ের তথ্যে গরমিল, বিপুল সম্পদ ও কর ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধে প্রতিষ্ঠান তিনটির বিষয়ে এই অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।

দেশে নোট ও গাইডবই প্রকাশ এবং বিক্রি করা অবৈধ। তারপরও চোখের সামনে দেদার নোট ও গাইডবই প্রকাশ করে যাচ্ছে বড় পাবলিকেশনগুলো। তাদের এই পুরো অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও তা নির্মূলে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এবার পাবলিকেশনগুলোর অবৈধ ব্যবসা এবং এর পেছনে বিপুল সম্পদের খোঁজে নেমেছে দুদক। সংস্থাটির সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে ২২টি বড় পাবলিকেশন্সের নানান অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ায় এর মধ্যে তিনটি পাবলিকেশন্স—পাঞ্জেরী, লেকচার ও পপিকে অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য বাছাই করা হয়।
দুদকের অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠান তিনটির বিগত কয়েক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী, অডিট রিপোর্ট, আয়কর রিটার্ন, ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ওই সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী, অডিট রিপোর্ট দেখানো বিক্রির পরিমাণের চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো আয়কর ফাঁকি দিতে রিটার্নে বিক্রি কম দেখিয়ে ব্যবসায় লোকসান দেখিয়েছে। তাই দুদক মনে করে, কর বিভাগের অনুসন্ধানের পরই এর আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। সে জন্য সংস্থাটি ১১ মে এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়ে পাবলিকেশন্স তিনটির আয় ও সম্পদ লুকানো এবং কর ফাঁকির বিষয়টি অনুসন্ধানের পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করে। দুদকের চিঠি পেয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট কর বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। এখন কর বিভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয় ও সম্পদের খোঁজে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে।

এনবিআরের কর বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দুদকের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি পাবলিকেশন্সের বিরুদ্ধে অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্য যাচাই করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

অবৈধ নোট-গাইড ব্যবসা ও কর ফাঁকির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লেকচার পাবলিকেশন্সের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নোটবইয়ের ব্যবসা অবৈধ হলেও এটি চলছে। আর সত্যি কথা, আমরা বই না করলে দেশে বই প্রকাশিত হবে না। এখন দুদক ২০১৭ সাল থেকে এগুলো নিয়ে তদন্ত করছে। এটি শুধু আমার একার সমস্যা নয়; আমাদের সমিতির সবাই মিলে বিষয়টি দুদককে বোঝানোর চেষ্টা করছে।জানা যায়, পুরো বিষয়টি নিয়ে দুদকের সঙ্গে দেনদরবার করছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। এ বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান যেকোনো পদক্ষেপ নিলে আমরা সহযোগিতা করি। সক্ষমতায় এখানকার সব পাবলিকেশন সমান নয়। কারও ব্যবসা বড়, কারও ছোট। ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো হিসাব-নিকাশে ভুল হতে পারে। তবে এনবিআরের বিষয়টি এখনো অবগত নই। তাই সবকিছু না জেনে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’ পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী কামরুল হাসান শায়কের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে একটি সূত্র জানায়, তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন।