১১:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুডি’স রেটিংয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতি

  • অনলাইন ডেস্ক,
  • প্রকাশ : ১০:৪৫:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪
  • ২৫৪৭ বার পড়া হয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং বা ঋণমান নিরূপণকারী সংস্থা মুডি’স ইনভেস্টরস সার্ভিস জানিয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ‘নেতিবাচক’ ক্যাটাগরি থেকে ‘স্থিতিশীল’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে।
যা দেশের ব্যাংকিং খাত এবং অর্থনীতির জন্য বড় সুখবর। কারণ, মুডি’সের রেটিং-এর ওপর ভিত্তি করেই বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোন দেশের সাথে লেনদেনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
গত বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মুডি’স-এর বিশ্লেষকরা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে বলেন, চলমান সম্পদের গুণগতমান সংক্রান্ত কিছু সমস্যা সত্ত্বেও মুনাফা আয় ও তারল্যের চাপ হ্রাস পেয়েছে, যা আমাদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়েছে। স্থির নেট সুদের মার্জিন এবং ক্রেডিট খরচের কারণে মুনাফা আয় স্থিতিশীল হবে।
এতে আরও বলা হয়, মূলধনও স্থিতিশীল হবে- কারণ অভ্যন্তরীণ মূলধন উৎপাদন মূলধন ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, ঋণদাতাদের তহবিল এবং তারল্যও স্থিতিশীল হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন সিস্টেমিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজন তখন ব্যাংকগুলোকে সরকার সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।
এর আগে, ২০২৩ সালের মার্চে যখন বাংলাদেশ আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির জন্য গিয়েছিল, তখন মুডিসের রেটিং ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল।
এদিকে মুডিস তার প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে যাওয়া এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে অর্থনীতির পরিচালন পরিবেশের অবনতির আশঙ্কাও জানিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। ২০২৪ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে ৬ শতাংশ এবং ২০২৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে যেতে পারে বলেও ধারণা করেছে মুডিস।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাহ্যিক চাহিদার দুর্বলতা এবং ক্রমাগত উচ্চ আমদানি মূল্য এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়তে পারে। ফলে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি মাঝারি আকারে প্রসারিত হবে।
ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে মুডিস বলছে, সম্পদের ঝুঁকি বাড়তে থাকা সত্ত্বেও ঋণ-ক্ষতির বিধানগুলো বিস্তৃতভাবে স্থির থাকবে; কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে সক্রিয়ভাবে পুনর্গঠন বা সমস্যা এক্সপোজারগুলো পুনর্নির্ধারণ এবং ঋণগুলোকে ননপারফরম্যান্স হিসাবে শ্রেণিবিন্যাস করছে। এটি ব্যাংকের মূলধন স্থিতিশীল হওয়ার পূর্বাভাস দেয়।
এতে আশা করা হয়, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ মূলধন উৎপাদন মূলধন খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে। তবে ব্যাংকগুলোর বর্তমান মূলধনের মাত্রা পরিমিত থাকবে।
তুলনামূলকভাবে দুর্বল মূলধন বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোকে বড় এবং অপ্রত্যাশিত ঋণ ক্ষতির বিরুদ্ধে সীমিত বাফার দেবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো উচ্চস্তরের অকার্যকর ঋণ এবং সরকারি মূলধনের অনুপস্থিতির কারণে তাদের দুর্বল উপার্জন ক্ষমতার কারণে পুঁজিবদ্ধ থাকবে।
মুডিস বলেছে, ব্যাংকগুলোর তহবিল এবং তারল্য স্থিতিশীল হবে; কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানি সীমিতকরণের পদক্ষেপ এবং ঋণপত্র খোলার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বহিঃপ্রবাহ কমাতে সাহায্য করেছে। রেমিট্যান্সের জন্য সরকার এবং ব্যাংকগুলোর প্রদত্ত প্রণোদনা বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রার তারল্যের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দেশের ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে। কারণ প্রয়োজনের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ডলারে তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত হবে বলেও জানানো হয় মুডিসের প্রতিবেদনে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মুডি’স রেটিংয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতি

প্রকাশ : ১০:৪৫:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং বা ঋণমান নিরূপণকারী সংস্থা মুডি’স ইনভেস্টরস সার্ভিস জানিয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ‘নেতিবাচক’ ক্যাটাগরি থেকে ‘স্থিতিশীল’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে।
যা দেশের ব্যাংকিং খাত এবং অর্থনীতির জন্য বড় সুখবর। কারণ, মুডি’সের রেটিং-এর ওপর ভিত্তি করেই বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোন দেশের সাথে লেনদেনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
গত বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মুডি’স-এর বিশ্লেষকরা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে বলেন, চলমান সম্পদের গুণগতমান সংক্রান্ত কিছু সমস্যা সত্ত্বেও মুনাফা আয় ও তারল্যের চাপ হ্রাস পেয়েছে, যা আমাদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়েছে। স্থির নেট সুদের মার্জিন এবং ক্রেডিট খরচের কারণে মুনাফা আয় স্থিতিশীল হবে।
এতে আরও বলা হয়, মূলধনও স্থিতিশীল হবে- কারণ অভ্যন্তরীণ মূলধন উৎপাদন মূলধন ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, ঋণদাতাদের তহবিল এবং তারল্যও স্থিতিশীল হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন সিস্টেমিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজন তখন ব্যাংকগুলোকে সরকার সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।
এর আগে, ২০২৩ সালের মার্চে যখন বাংলাদেশ আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির জন্য গিয়েছিল, তখন মুডিসের রেটিং ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল।
এদিকে মুডিস তার প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে যাওয়া এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে অর্থনীতির পরিচালন পরিবেশের অবনতির আশঙ্কাও জানিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। ২০২৪ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে ৬ শতাংশ এবং ২০২৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে যেতে পারে বলেও ধারণা করেছে মুডিস।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাহ্যিক চাহিদার দুর্বলতা এবং ক্রমাগত উচ্চ আমদানি মূল্য এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়তে পারে। ফলে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি মাঝারি আকারে প্রসারিত হবে।
ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে মুডিস বলছে, সম্পদের ঝুঁকি বাড়তে থাকা সত্ত্বেও ঋণ-ক্ষতির বিধানগুলো বিস্তৃতভাবে স্থির থাকবে; কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে সক্রিয়ভাবে পুনর্গঠন বা সমস্যা এক্সপোজারগুলো পুনর্নির্ধারণ এবং ঋণগুলোকে ননপারফরম্যান্স হিসাবে শ্রেণিবিন্যাস করছে। এটি ব্যাংকের মূলধন স্থিতিশীল হওয়ার পূর্বাভাস দেয়।
এতে আশা করা হয়, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ মূলধন উৎপাদন মূলধন খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে। তবে ব্যাংকগুলোর বর্তমান মূলধনের মাত্রা পরিমিত থাকবে।
তুলনামূলকভাবে দুর্বল মূলধন বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোকে বড় এবং অপ্রত্যাশিত ঋণ ক্ষতির বিরুদ্ধে সীমিত বাফার দেবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো উচ্চস্তরের অকার্যকর ঋণ এবং সরকারি মূলধনের অনুপস্থিতির কারণে তাদের দুর্বল উপার্জন ক্ষমতার কারণে পুঁজিবদ্ধ থাকবে।
মুডিস বলেছে, ব্যাংকগুলোর তহবিল এবং তারল্য স্থিতিশীল হবে; কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানি সীমিতকরণের পদক্ষেপ এবং ঋণপত্র খোলার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বহিঃপ্রবাহ কমাতে সাহায্য করেছে। রেমিট্যান্সের জন্য সরকার এবং ব্যাংকগুলোর প্রদত্ত প্রণোদনা বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রার তারল্যের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দেশের ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে। কারণ প্রয়োজনের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ডলারে তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত হবে বলেও জানানো হয় মুডিসের প্রতিবেদনে।