০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কোটা সংস্কার আন্দোলন

পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র নারীর গায়ে হাত তোলা সমর্থন করে না: মেহজাবীন

কোটা সংস্কার আন্দোলনে চলমান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গত কয়েক দিনে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। নারী শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। যা দেখে পোস্ট করে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন অভিনেতা-অভিনেত্রী, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। এই সারিতে এবার যোগ দিয়েছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। নিজের ফেরিফায়েড পেজ এ দেওয়া দীর্ঘ পোস্টে তিনি কোরআন-হাদিসের রেফারেন্সসহ নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের বিষয় তুলে ধরেছেন।
পোস্ট এ মেহজাবীন লিখেন, ছোটবেলা থেকে জেনেছি, পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র নারীর গায়ে হাত তোলা সমর্থন করেনা। আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থও কখনো নারীর প্রতি সহিংসতা শেখায়নি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো’। হাদীসে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা নারীদের সঙ্গে সদাচরণ করে’। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য, গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে আজকাল এর ভিন্ন চিত্র, মর্মান্তিক সব ভিডিও চিত্র দেখতে হচ্ছে। একজন নয়, দুইজন নয়, আমারই অসংখ্য বোনের ওপর নির্বিকার ভঙ্গিতে হামলা চালানো হচ্ছে, রক্তাক্ত করা হচ্ছে।
কী নির্মম, কী নৃশংস! ন্যায়-অন্যায়ের প্রসঙ্গে পরে আসছি, তবে আমার অবস্থান থেকে বলবো: সর্বোচ্চ কোনো যুক্তির অজুহাতেও নারীর প্রতি এই সহিংসতা মেনে নেয়া যায় না। ‘না’ মানে ‘না’; কক্ষনো না। ছাত্র-ছাত্রীরা কি-ই বা করেছিল? তারা তাদের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছিল।
কোটা সংস্কারের দাবী তুলেছিল। তাই তো? একটি গণতান্ত্রিক দেশে স্ব-অধিকারের দাবি যে কেউ তুলতে পারে। কিন্তু তাই বলে নারীর গায়ে হাত তোলা, ‘আবু সাঈদ’-এর মতো সম্ভাবনাময় তরুণকে হত্যা করা-এসব কি সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে? সমাধানের অন্য কোনো উপায় কি ছিল না? গুলি কেন করতে হলো? পরিস্থিতি হয়ত আজ কিংবা কাল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু যে মায়ের বুক খালি হলো, যে পরিবারের মুখের হাসি চলে গেল, আমরা কি সেই শূণ্যতা অন্য কিছুর বিনিময়ে পূর্ণ করতে পারব? কক্ষনো না। তাছাড়া ইতিহাস সাক্ষী: শক্তি যত বড়-ই হোক, ছাত্র সমাজের ওপর চড়াও হয়ে যুগে যুগে কেউ কখনো কিছুই অর্জণ করতে পারেনি। তাহলে কেন এই ব্যর্থ আস্ফালন?

 

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কিংবা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা সবসময়ই বুকের ভেতর লালন করি। আমরা গর্ব করি বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু এই দেশে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা যাবে না, অধিকারের দাবি তোলা যাবে না, সবকিছুর ঊর্ধ্বে যোগ্যতার পরিচয়টাকেই সবচেয়ে বড় করে দেখা যাবে না, প্রশাসনের চাওয়া-পাওয়ার বিরুদ্ধে গেলেই হামলার শিকার হতে হবে, অকাতরে অকাল প্রাণ বিলিয়ে দিতে হবে-এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন কি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেখেছিলেন? আমার মনে হয় না।
দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে দুর্নীতি-প্রায় সব ইস্যুতেই তো আমরা চুপ থাকি। রক্ষক ভক্ষক হয়ে গেলেও আমরা নিরবে সয়ে যাই। অপেক্ষা করি, হয়ত একটা না একটা সমাধান আসবে। আজ না হলেও দুদিন পরে আসবে। অন্যান্য ইস্যুতে আমরা সামাজিক মাধ্যমেও এতটা সোচ্চার হই না। তাহলে ইদানিং কেন হচ্ছি? কেন কোটা সংস্কার ইস্যুতে দলমত নির্বিশেষে আমাদের মতো সাধারণ জনগণ সরকারের পদক্ষেপের নিন্দা করছি? কারণ একটাই: কোটা সংস্কার এখন সময়ের দাবি। যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধান জরুরি।
ভুলে গেলে চলবে না, আমরা এই সাধারণ জনগণই কিন্তু মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, উড়াল সেতু ইত্যাদিসহ সরকারের অনেক যুগান্তকারি সাফল্যে গর্বিত হয়ে হাত তালি দিয়েছিলাম। গালভরা প্রশংসা করেছিলাম। সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছিলাম। নিশ্চয়ই ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে কোটা সংস্কার হবার পর আমরা পুনরায় সরকারের পাশে দাঁড়াব। এক পক্ষ হয়ে দেশের সব সমস্যার সমাধান করার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করব। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। অর্থাৎ সব কথার শেষ কথা: ছাত্ররা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দমিয়ে না রেখে তাদের যৌক্তিক দাবীতে সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আমি মেহজাবীন চৌধুরী আকুল আবেদন করছি। আমার বিশ্বাস, আমরা নিরাশ হবো না।

জনপ্রিয় সংবাদ

কোটা সংস্কার আন্দোলন

পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র নারীর গায়ে হাত তোলা সমর্থন করে না: মেহজাবীন

প্রকাশ : ০১:১৫:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনে চলমান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গত কয়েক দিনে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। নারী শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। যা দেখে পোস্ট করে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন অভিনেতা-অভিনেত্রী, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। এই সারিতে এবার যোগ দিয়েছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। নিজের ফেরিফায়েড পেজ এ দেওয়া দীর্ঘ পোস্টে তিনি কোরআন-হাদিসের রেফারেন্সসহ নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের বিষয় তুলে ধরেছেন।
পোস্ট এ মেহজাবীন লিখেন, ছোটবেলা থেকে জেনেছি, পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র নারীর গায়ে হাত তোলা সমর্থন করেনা। আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থও কখনো নারীর প্রতি সহিংসতা শেখায়নি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো’। হাদীসে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা নারীদের সঙ্গে সদাচরণ করে’। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য, গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে আজকাল এর ভিন্ন চিত্র, মর্মান্তিক সব ভিডিও চিত্র দেখতে হচ্ছে। একজন নয়, দুইজন নয়, আমারই অসংখ্য বোনের ওপর নির্বিকার ভঙ্গিতে হামলা চালানো হচ্ছে, রক্তাক্ত করা হচ্ছে।
কী নির্মম, কী নৃশংস! ন্যায়-অন্যায়ের প্রসঙ্গে পরে আসছি, তবে আমার অবস্থান থেকে বলবো: সর্বোচ্চ কোনো যুক্তির অজুহাতেও নারীর প্রতি এই সহিংসতা মেনে নেয়া যায় না। ‘না’ মানে ‘না’; কক্ষনো না। ছাত্র-ছাত্রীরা কি-ই বা করেছিল? তারা তাদের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছিল।
কোটা সংস্কারের দাবী তুলেছিল। তাই তো? একটি গণতান্ত্রিক দেশে স্ব-অধিকারের দাবি যে কেউ তুলতে পারে। কিন্তু তাই বলে নারীর গায়ে হাত তোলা, ‘আবু সাঈদ’-এর মতো সম্ভাবনাময় তরুণকে হত্যা করা-এসব কি সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে? সমাধানের অন্য কোনো উপায় কি ছিল না? গুলি কেন করতে হলো? পরিস্থিতি হয়ত আজ কিংবা কাল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু যে মায়ের বুক খালি হলো, যে পরিবারের মুখের হাসি চলে গেল, আমরা কি সেই শূণ্যতা অন্য কিছুর বিনিময়ে পূর্ণ করতে পারব? কক্ষনো না। তাছাড়া ইতিহাস সাক্ষী: শক্তি যত বড়-ই হোক, ছাত্র সমাজের ওপর চড়াও হয়ে যুগে যুগে কেউ কখনো কিছুই অর্জণ করতে পারেনি। তাহলে কেন এই ব্যর্থ আস্ফালন?

 

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কিংবা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা সবসময়ই বুকের ভেতর লালন করি। আমরা গর্ব করি বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু এই দেশে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা যাবে না, অধিকারের দাবি তোলা যাবে না, সবকিছুর ঊর্ধ্বে যোগ্যতার পরিচয়টাকেই সবচেয়ে বড় করে দেখা যাবে না, প্রশাসনের চাওয়া-পাওয়ার বিরুদ্ধে গেলেই হামলার শিকার হতে হবে, অকাতরে অকাল প্রাণ বিলিয়ে দিতে হবে-এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন কি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেখেছিলেন? আমার মনে হয় না।
দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে দুর্নীতি-প্রায় সব ইস্যুতেই তো আমরা চুপ থাকি। রক্ষক ভক্ষক হয়ে গেলেও আমরা নিরবে সয়ে যাই। অপেক্ষা করি, হয়ত একটা না একটা সমাধান আসবে। আজ না হলেও দুদিন পরে আসবে। অন্যান্য ইস্যুতে আমরা সামাজিক মাধ্যমেও এতটা সোচ্চার হই না। তাহলে ইদানিং কেন হচ্ছি? কেন কোটা সংস্কার ইস্যুতে দলমত নির্বিশেষে আমাদের মতো সাধারণ জনগণ সরকারের পদক্ষেপের নিন্দা করছি? কারণ একটাই: কোটা সংস্কার এখন সময়ের দাবি। যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধান জরুরি।
ভুলে গেলে চলবে না, আমরা এই সাধারণ জনগণই কিন্তু মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, উড়াল সেতু ইত্যাদিসহ সরকারের অনেক যুগান্তকারি সাফল্যে গর্বিত হয়ে হাত তালি দিয়েছিলাম। গালভরা প্রশংসা করেছিলাম। সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছিলাম। নিশ্চয়ই ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে কোটা সংস্কার হবার পর আমরা পুনরায় সরকারের পাশে দাঁড়াব। এক পক্ষ হয়ে দেশের সব সমস্যার সমাধান করার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করব। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। অর্থাৎ সব কথার শেষ কথা: ছাত্ররা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দমিয়ে না রেখে তাদের যৌক্তিক দাবীতে সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আমি মেহজাবীন চৌধুরী আকুল আবেদন করছি। আমার বিশ্বাস, আমরা নিরাশ হবো না।